Thursday, May 5, 2016

হৃদয়ের আয়নায়


বন্ধুত্ব এমন একটি বন্ধন, যাতে থাকে শর্তহীন ও স্বার্থহীন ভালোবাসা। ‘বন্ধু’ শব্দের মধ্যেই মিশে আছে পরম নির্ভরতা ও বিশ্বাসের ছোঁয়া। হেলেন কিলার বলেছেন- ‘একজন বিশ্বস্ত বন্ধু দশ হাজার আত্মীয়ের সমান’। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে বন্ধুত্বের পরিধি এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে। হাত বাড়ালেই ঘরে বসে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যায় অনায়াসে। একাকীত্ব কিংবা বিষণœতার কালো ছায়া যখন গ্রাস করে ফেলে ধীরে ধীরে অস্থির মনকে, প্রযোজন যখন খুব তীব্র  হয়, বিপদ যখন সন্নিকটে, নিখাদ বন্ধুত্ব তখন আপন মহিমায় জ্বলে ওঠে। বন্ধুত্ব যেন নতুন করে অনুপ্রেরণা দেয় সকল বাধার দেয়াল মাড়িয়ে নতুন স্বপ্নে নতুনভাবে চলার উৎসাহ জোগায়। তখন আর নিজেকে একাকী মনে হয় না, আনন্দ-বেদনার মাঝে এই এক ভালোলাগার-ভালোবাসার বোধ জন্ম হয়। 

স্কুল, কলেজের সহপাঠী কিংবা কর্মময় জীবনের কোনো সহকর্মী নয়, আজ আপনাদের কাছে ভিন্ন আঙ্গিকে পরিচিত কিছু প্রিয় মুখের কথা বলব, যাদের নিখাদ বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসার ছোঁয়ায় হৃদয়ে লেগেছে সুখের দোলা, মন হয়েছে উজ্জীবিত ও প্রাণবন্ত।

মাসুদ রানা যার সংস্পর্শে এসে বুঝলাম হাজার হাজার কৃত্রিম ভালোবাসার ভিড়ে অকৃত্রিম ভালোবাসায় পূর্ণ বন্ধুত্বের আসল রূপ। তার সঙ্গে পরিচয় ২০০৯ সাল থেকে। তার জীবনের দৃশ্যপটের সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে আমার জীবনের অনেকখানি মিল। কাছাকাছি না থেকেও মানুষকে এত আপন করা যায় আর ভালোবাসায় সিক্ত করা যায়, তার কাছ থেকে শিখলাম। দুজন দুই প্রান্তের বাসিন্দা। দুজনের মাঝে  প্রায় ৩০০ কি.মি. লম্বা দূরত্বের পথ। এই দীর্ঘ পথও বাধা হতে পারেনি কখনো বন্ধুত্বের পরম মমতায়। এত দূরে থেকেও যেন মনে হয় আমরা অনেক কাছে। তার কাছ থেকে এমন নিখাদ ভালোবাসা আর নির্মল বন্ধুত্বের ছোঁয়ায় বারে বারে মুগ্ধ হয়েছি, যতবারই তার সান্নিধ্য পেয়েছি। যে কোনো বিষয়ে কিংবা যে কোনো কাজে যখন যা সহায়তা চেয়েছি, কখনো না শব্দ আসেনি মুখে। হাসিমুখে সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে সবসময়। পাওয়ার চেয়ে দেওয়ার মাঝে যেন সুখ খোঁজে পায় সেই। অনেক সময় যেখানে খুব চেনা-জানা কিংবা বাল্যকালের বন্ধুদেরও সময়ের পরিক্রমায় কাছে পাওয়া যায় না।

বন্ধুত্বের আসলে কোনো বয়সসীমা নেই। মনের মিল হলে যখন তখন যেখানে সেখানে বন্ধুত্ব হতে পারে। ২০০৯ সালের দিকে যখন কাঁচা হাতে লেখালেখি শুরু করেছিলাম, ঐ সময় ‘সাপ্তাহিক’-এর পাঠক বিভাগে বন্ধুকে নিয়ে আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছিল ‘বন্ধুকে ভীষণ মনে পড়ে’ শিরোনামে। আর ঐ লেখার সুবাদে নওগাঁ জেলার দেওয়ান মিরু ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় সেলফোনে। সেই থেকে আজ অব্দি বিন্দুমাত্রও ভালোবাসার টান পড়েনি দু’জনের মাঝে। বন্ধুত্বের মমতায় দীর্ঘ ৭ বছর  প্রতীক্ষার পর গত বছর ঈদের ছুটিতে আমাদের প্রথম দেখা হয়। দূরত্ব, সময়-সুযোগ আর ব্যস্তময় নগর জীবনের যাঁতাকলে পড়ে মন চাইলেও দেখা সাক্ষাৎ করতে পারিনি এর পূর্বে। দেওয়ান মিরু রানা যার কাছ থেকে প্রত্যাশার চাইতেও বেশি ভালোবাসা পেয়েছি। মুগ্ধ হয়েছি বারবার খালাম্মা, বড় আপা, ভাবী আর মিরু ভাইয়ের শ্বশুর-শাশুড়ির আতিথেয়তায় আর মধুর ব্যবহারে। খুব অল্প সময়ে আমাকে আপন করে নিজের পরিবারের একজন করে নিয়েছিলেন প্রথম সাক্ষাতে।

চলার পথে সৎ, ভালো মন-মানসিকতার বন্ধু ও শুভাকাক্সক্ষী পাওয়া খুব কঠিন। যার উৎসাহ আর প্রেরণায় জীবন গতিময় হয়। সৌভাগ্যক্রমে আমিও তেমন একজন মানুষের দেখা পেয়েছিলাম। ২০১৩ সালের দিকে (আই.সি.এম.এ) প্রফেশনাল কোর্স করতে গিয়ে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার ইমাম হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। মানুষের সঙ্গে খুব সহজে মিশতে পারার অসাধারণ গুণ আছে তার মাঝে। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না কিংবা সামাজিক-পারিবারিক সব বিষয় অনায়াসে শেয়ার করি একে-অপরকে নির্দ্বিধায়। যে কোনো কাজ আমি ওকে ছাড়া কিংবা ও আমাকে ছাড়া করতে পারে না মোটেই। কোথাও যেতে হবে সঙ্গে আমাকে ও নিয়ে যাবে, এমনকি কোথাও দাওয়াত কিংবা ভ্রমণ তাতেও অংশগ্রহণ করতে হবে। ঠিক একই রকম ঘটে আমার বেলায়ও। বাল্যকালের বন্ধু হলে যেমনটি করে ঠিক তেমনি সম্পর্ক আমাদের মাঝে। যে কোনো কঠিন সমস্যার খুব সহজ সমাধান কীভাবে যেন অনায়াসে বের করে নিয়ে আসতে পারে আর তাই অনেক কঠিন সময়েও তার উপর আস্থা রাখা যায়। সবসময় সুপরামর্শ কিংবা সঠিক দিকনির্দেশনা পাই তার কাছ থেকে, হোক তা ক্যারিয়ার সম্পর্কিত কিংবা অন্য যে কোনো বিষয়ে।


www.shaptahik.com 

No comments:

Post a Comment